আতশি কাচের নিচে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
‘সোহান (নুরুল হাসান) দলের সেরা উইকেটকিপার। সে দলে ছিল, তার কোনো ইনজুরিও ছিল না, তারপরও সে কেন উইকেটকিপিং করল না? সিদ্ধান্তটা কার, এটা আমাদের জানা দরকার।’
গত মাসের শুরুতে শারজায় অনুষ্ঠিত আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রসঙ্গ টেনে প্রথম আলোকে কাল কথাটা বলেছেন বিসিবির এমন একজন পরিচালক, জাতীয় দল–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাঁকে এখন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুধু ওপরের বিষয়টিই নয়, গত এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দলের খেলা আন্তর্জাতিক ম্যাচের প্রতিটি আলোচিত সিদ্ধান্ত বা ঘটনাই পর্যালোচনা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছে বিসিবির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। এসব নিয়ে কথা বলা হবে দলের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনটি টি–টোয়েন্টিতেই দলে থেকেও নুরুল উইকেটকিপিং করেননি কেন, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এরই মধ্যে মিলেছে। তবে জাকেরকে দিয়ে কিপিং করানোর সিদ্ধান্তটা দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের বলে অভিযোগের যে তির, সেটি ছোড়া হচ্ছে ভুল লক্ষ্যের দিকে। সিদ্ধান্তটা আসলে ছিল লিটন দাস চোটে পড়ায় টি–টোয়েন্টি সিরিজে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া জাকেরের নিজেরই।
দলসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উইকেটকিপিং করলে স্টাম্পের পেছন থেকে দলকে ভালোভাবে দল পরিচালনা করতে পারবেন, এই যুক্তিতে জাকের নিজেই ওই সিরিজে কিপিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সালাহউদ্দিন বরং তাতে ভেটো দিয়ে নুরুলের কিপিং করা উচিত বলে মত দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে সূত্র। জাকের তাতে রাজি না হলে প্রধান কোচ ফিল সিমন্সকে সালাউদ্দিন অনুরোধ করেছিলেন জাকেরের সিদ্ধান্ত বদলাতে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে অধিনায়কের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে বিশ্বাসী সিমন্স সে চেষ্টাই করেননি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজ বাংলাদেশ জিতলেও জাকেরের কিপিং করার সিদ্ধান্ত যেমন ভ্রু কুঁচকে দিয়েছে বিসিবির শীর্ষ পর্যায়েই, একইভাবে সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মেহেদী হাসান মিরাজের অধিনায়কত্বের কিছু খণ্ডাংশ নিয়েও আছে প্রশ্ন।
সুপার ওভারে নিষ্পত্তি হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মূল ম্যাচের শেষ ওভারে ৫ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, তখন বোলিং দেওয়া হয় অকেশনাল স্পিনার সাইফ হাসানকে। মিরপুরের স্পিনসহায়ক উইকেটে বাংলাদেশ ম্যাচটা চার বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে খেললেও চারজনের বোলিং কোটাই শেষ করে ফেলা হয় ৪৮তম ওভারের মধ্যে। শেষ ওভারে সাইফ কেন—জাকেরের ‘কিপিং–রহস্যের’ মতো এই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজবে বোর্ড।
সাইফকে নিয়ে উল্টো ঘটনাও আছে। গত মাসে আবুধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে এক মেডেনসহ ৩ উইকেট নিয়েছিলেন সাইফ। অথচ ৩৮তম ওভারের পর তাঁকে আর বোলিংয়েই আনেননি অধিনায়ক মিরাজ!
মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টাই ম্যাচে রিশাদকে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্তও ছিল আলোচিত। ৯–এ নেমেও ১৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে রিশাদ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, নাসুম আহমেদের (২৬ বলে ১৪ রান) জায়গায় ৭ নম্বরে নামালে বাংলাদেশের রানটা হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের টাইয়ের সীমানা থেকে বাড়িয়ে রাখতে পারতেন তিনি। তাহলে কেন রিশাদ ৯–এ, তা নিয়েও কৌতূহল আছে বিসিবিতে।
জাতীয় দল–সংশ্লিষ্ট সবকিছুতে এখন থেকে সরাসরি দৃষ্টি রাখবেন পরিচালনা পর্ষদে থাকা সাবেক চার ক্রিকেটার—এমন একটা অলিখিত সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে হয়েছে বিসিবিতে। তাঁদের মধ্যে স্বয়ং বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম ছাড়াও আছেন সহসভাপতি ফারুক আহমেদ, খালেদ মাসুদ ও আবদুর রাজ্জাক।
বিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক বলেছেন, ‘জাতীয় দলের যে লেজেগোবরে অবস্থা, তাতে কিছু বিষয় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা দরকার। তারা কখন কী ভেবে কী সিদ্ধান্ত নেয়, প্রায়ই তা বোঝা যায় না। টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ, অধিনায়কদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয়ে তাঁদের ব্যাখ্যা শুনতে হবে। প্রয়োজনে এ সময়ে নির্বাচক কমিটির কাজও পর্যালোচনা করে দেখা হবে।’







