প্রযুক্তি এখন সবার হাতে হাতে, তার সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যার ফলে অনলাইনে প্রাপ্ত তথ্যগুলো কোনটা ঠিক আর কোনটা মিথ্যা, তা পরখ করা সাধারণ মানুষের জন্য দুরূহ হয়ে উঠেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করে এমন এমন তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা দেখে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ফলে সমাজে ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকম অস্থিরতা দেখা দেয়।
এ কারণে তথ্য পেলেই তা যাচাই করা ছাড়া প্রচার করার ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি।
যেকোনো তথ্য পেলেই তা ভালোভাবে যাচাই না করে বিশ্বাস করা উচিত নয়, শেয়ার করা তো অনেক পরের বিষয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বসো। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।
’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে কোনো কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)
বর্তমান যুগেও দেখা যায় যে অনলাইনে উড়ে বেড়ানো বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য বিশ্বাস করে কিংবা তা শেয়ার করে মানুষকে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়ে। পরে নিজেকে ধিক্কার দেওয়া ছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না।
অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায় জেনে-বুঝে।
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য প্রতিপক্ষের ছবি ও ভয়েস ব্যবহার করে এমন কিছু কনটেন্ট ছড়ায়, যা তাদের টার্গেট করা ব্যক্তিকে সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করে। এ ধরনের কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। এ ধরনের কাজ সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করে। মানুষের মধ্যে পরস্পর শত্রুতা সৃষ্টি করে। কখনো কখনো এর সূত্র ধরে বড় ধরনের ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হয়।
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য প্রতিপক্ষের ছবি ও ভয়েস ব্যবহার করে এমন কিছু কনটেন্ট ছড়ায়, যা তাদের টার্গেট করা ব্যক্তিকে সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করে। এ ধরনের কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। এ ধরনের কাজ সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করে। মানুষের মধ্যে পরস্পর শত্রুতা সৃষ্টি করে। কখনো কখনো এর সূত্র ধরে বড় ধরনের ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হয়।
তা ছাড়া এসব কাজ মিথ্যা রটনাকারীর ঈমানও কলুষিত হয়। পবিত্র কোরআনে এই কাজকে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘একমাত্র তারাই মিথ্যা রটায়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না। আর তারাই মিথ্যাবাদী।’ (সুরা : নাহাল, আয়াত : ১০৫)
বিশেষ করে ঈমানদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটানো, তাকে হেয় প্রতিপন্নের চেষ্টা করা মারাত্মক ক্ষতিকর কাজ। নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের এ ধরনের কাজের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনে রাশিদ (রহ.) বলেন, একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর অপেক্ষায় বসে রইলাম। তিনি বেরিয়ে এসে আমাদের কাছে বসলেন এবং বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যার সুপারিশ আল্লাহর নির্ধারিত কোনো হদ বাস্তবায়িত করার
পথে বাধা সৃষ্টি করে, সে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে মিথ্যা মামলা দেয়, সে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। যে ব্যক্তি কোনো ঈমানদারের এমন দোষ বলে বেড়ায়, যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাকে জাহান্নামিদের আবর্জনার মধ্যে বসবাস করাবেন। অতএব, তাকে শিগগিরই তার কথা থেকে তাওবা এবং ত্যাগ করা উচিত। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৯৭)
মিথ্যা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা মুনাফিকদের বড় হাতিয়ার। তারা মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য নবী পরিবারের বিরুদ্ধেও মিথ্যা ছড়াতে পিছপা হয়নি। এমনকি আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-কে (নাউজুবিল্লাহ) ‘মিথ্যুক’ বলে প্রচার করার দুঃসাহস করেছিল। তখন মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করে বলেছিলেন, ‘যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে ঈমান আনে না, তারাই তো শুধু মিথ্যা রটনা করে, আর তারাই মিথ্যাবাদী।’ (সুরা : আন নাহল, আয়াত : ১০৫)
বর্তমান যুগে যারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে, তারা খুব ভালো করেই জানে যে এসব তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু তারা হয়তো এটা অনুভব করে না যে এই কাজটি তাদের কত বড় ক্ষতি করছে। তাদের মুনাফিকের খাতায় নাম লিখিয়ে জাহান্নামের আবর্জনা হিসেবে প্রস্তুত করছে। নাউজুবিল্লাহ।
অনেকে আবার এ ধরনের তথ্য ছড়ায় মজা নেওয়ার জন্য। অন্যকে তিরস্কার করার জন্য। পবিত্র কোরআনে যে
কাজকে মূর্খদের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তার গোত্রকে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে তোমরা একটি গাভি জবাই করবে।’ তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছ?’ সে বলল, ‘আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৬৭)
কাউকে বিদ্রুপ করে মানুষকে মজা দেওয়ার জন্য এআই কনটেন্ট তৈরি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যম অবলম্বন করাও মূর্খসুলভ কাজ। এ ধরনের অনর্থক জিনিস দিয়ে মানুষকে আল্লাহর জিকির থেকে বিরত থাকতে সহযোগিতা করাও জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)
কেউ আবার এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য তৈরি ও শেয়ার করে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য। তাদের উদ্দেশ্য থাকে সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেওয়া। সমাজে আতঙ্ক, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেওয়ার এই বাসনা মানুষকে বিপথগামী করে। মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)
আবার কেউ কেউ সমাজে অশ্লীলতা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বর্তমানে এআই ব্যবহার করে অশ্লীলতা
ছড়ানোর প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়। অথচ এ ধরনের কাজ আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে। যারা এসব কাজে লিপ্ত হবে, মহান আল্লাহ তাদের লাঞ্ছনাকর শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর
আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯) নাউজুবিল্লাহ।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।







