নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইতিহাস রচনা করল ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল। গত রবিবার (২ নভেম্বর ২০২৫) নাভি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে হারমানপ্রীত কৌরের নেতৃত্বাধীন ভারত দল।
স্বপ্নের শিরোপা জয়
২০০৫ এবং ২০১৭ সালের ফাইনালে হারের বেদনা ভুলে এবার আর কোনো ভুল করেনি ‘উইমেন ইন ব্লু’। প্রথমে ব্যাট করে ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ তৈরি করে। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। এই জয়ের মধ্য দিয়ে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল তাদের ইতিহাসের প্রথম একদিনের বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল।
ফাইনালের নায়িকারা
ফাইনালে ভারতের জয়ের প্রধান কারিগর ছিলেন শেফালি বর্মা এবং দীপ্তি শর্মা।
শেফালি বর্মা: ব্যাট হাতে দারুণ খেলে করেন ৮৭ রান। এরপর বল হাতেও ঝলক দেখিয়ে ৩৬ রানে নেন দুটি মূল্যবান উইকেট।
দীপ্তি শর্মা: অলরাউন্ড নৈপুণ্যে নজর কাড়েন তিনি। ব্যাট হাতে ৫৮ রান করার পর, তার বিধ্বংসী বোলিংয়ে মাত্র ৩৯ রানের বিনিময়ে তিনি একাই তুলে নেন ৫ উইকেট।
ভারতের ইনিংসে স্মৃতি মান্ধানা (৪৫ রান) এবং রিচা ঘোষের দ্রুতগতির ৩৪ রানও দলের বড় সংগ্রহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দক্ষিণ আফ্রিকার লরা উলভার্ট সেঞ্চুরি (১০১ রান) করলেও তা দলের পরাজয় ঠেকাতে পারেনি।
প্রতিক্রিয়ার ঢল: ১৯৮৩-র পুনরাবৃত্তি
এই ঐতিহাসিক জয়ের পর ভারতজুড়ে অভিনন্দনের জোয়ার বইছে।
কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার এই জয়কে ১৯৮৩ সালে পুরুষ দলের বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “১৯৮৩ এক প্রজন্মকে বড় স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ আমাদের নারী দল সেই কাজটিই করল।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দলের লড়াকু মানসিকতার প্রশংসা করে খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানান।
অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলাম। একটা বড় ট্রফি ছাড়া পরিবর্তনের কথা বলা যায় না। আজ আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি। এটা দেশের প্রতিটি মেয়ের জয়।”
বিসিসিআই-এর বিশাল পুরস্কার
এই ঐতিহাসিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিসিসিআই) নারী দলকে ৫১ কোটি রুপি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই অর্থ খেলোয়াড় এবং সাপোর্ট স্টাফদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
এই জয় ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে হারমানপ্রীতের দল কেবল একটি ট্রফিই জেতেনি, তারা দেশের অগণিত তরুণীকে স্বপ্ন দেখানোর সাহস জুগিয়েছে।







