১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

জোহরান মামদানির নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে রিপাবলিকানদের চাপ

জোহরান মামদানির নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে রিপাবলিকানদের চাপ

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

জোহরান মামদানির নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় লাভ করেছেন। শহরের প্রথম মুসলিম এবং প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। 

এদিকে ওয়াশিংটন ডিসির রিপাবলিকান সমালোচকরা তখন বলেছিলেন, তারা তাকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মামদানির জয় হলে নিউইয়র্ক সিটিকে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন।

এ ছাড়া মামদানির নাগরিকত্ব সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর প্রশ্নকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
অনলাইন আল জাজিরা একটি দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলেছে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আগেই হুমকি দিয়েছিলেন মামদানি জিতলে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন। উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ৩৪ বছর বয়সী মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রশ্নে সুর মিলিয়ে তাকে মিথ্যা ভাবে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যা দেন।

কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা মামদানির নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং তাকে মার্কিন নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করে দেশত্যাগের ব্যবস্থা করার আহ্বানও জানিয়েছেন।

তারা কোনো প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করেছেন, তিনি কমিউনিস্ট ও ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন। তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। 

রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধি এন্ডি ওগলস ২৯ অক্টোবরের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘যদি মামদানির নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কাগজপত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়ে থাকে, তবে তিনি নাগরিক হতে পারেন না। অবশ্যই তিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, ‘একটি মহান আমেরিকান শহর এমন একজন কমিউনিস্টের হাতে পরিচালিত হতে চলেছে, যিনি প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী মতাদর্শকে সমর্থন করেছেন।’ তিনি মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে মামদানির বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমেরিকার নাগরিকত্ব সিস্টেমে কমিউনিজম বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকলে তা অবশ্যই প্রকাশ করতে হয়। আমি সন্দেহ করছি, তিনি তা প্রকাশ করেননি। যদি এটি নিশ্চিত হয়, তবে তাকে প্রথম ফ্লাইটে উগান্ডায় ফিরিয়ে পাঠানো হোক।
ফ্লোরিডার রিপাবলিকান প্রতিনিধি র‍্যান্ডি ফাইন ২৭ অক্টোবর নিউজম্যাক্সে বলেন, ‘বর্বররা এখন আর দরজার বাইরে নেই, তারা ভেতরে। আর মামদানি, যিনি মাত্র আট বছর আগে এখানে এসেছেন, তার এক নিখুঁত উদাহরণ। তিনি এখানে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। দেখুন, আমি যা পড়েছি তা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা পূরণ করেননি।’

মামদানি ১৯৯৮ সালে সাত বছর বয়সে উগান্ডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসে এবং ২০১৮ সালে নাগরিকত্ব পান। মার্কিন আইন অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্করা সাধারণত নাগরিক হওয়ার জন্য দেশে পাঁচ বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হয়। নাগরিকত্ব বাতিল করা শুধুমাত্র আদালতের আদেশে সম্ভব এবং ইতিহাসে এটি খুবই বিরল।

ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ জেরেমি ম্যাককিনি বলেন, নাগরিকত্ব বাতিল একটি বিরল প্রক্রিয়া, যার জন্য সরকারের ‘পরিষ্কার, অখণ্ড ও বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। তাদের দেখাতে হবে যে, আবেদনপত্রে এমন কোনো মিথ্যা ছিল যা নাগরিকত্বের ফলাফল বদলে দিতে পারে। মামদানির ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো প্রমাণ নেই।

মামদানির নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে গ্রীষ্মে, যখন তিনি ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রার্থী হন। জুনে রিপাবলিকান প্রতিনিধি ওগলস এক চিঠিতে বিচার বিভাগকে অনুরোধ করেন মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করতে।

তারা অভিযোগ করেন, তিনি ‘সন্ত্রাসবাদের সমর্থন লুকিয়ে নাগরিকত্ব পেয়েছেন’।

তারা উল্লেখ করেন মামদানির ২০১৭ সালের এক র‍্যাপ গান, যেখানে তিনি ‘হলি ল্যান্ড ফাইভ’-এর সমর্থনে গান লিখেছিলেন। এই পাঁচজন মুসলিমকে ‘হলি ল্যান্ড ফাউন্ডেশন’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা পরিচালনার জন্য ২০০৮ সালে হামাসকে আর্থিক সহায়তার অভিযোগে দণ্ডিত করা হয়। অনেক আইনজীবী মনে করেন, এই মামলার প্রমাণ শঙ্কাসাপেক্ষ।

ওগলস ও ফাইন আরো অভিযোগ করেন, মামদানি তার ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা (ডিএসএ) সদস্যপদ নাগরিকত্ব আবেদনপত্রে উল্লেখ করেননি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিএসএ কমিউনিস্ট পার্টি নয়। এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হার্ভি ক্লেয়ার বলেন, ডেমোক্র্যাটিক সমাজতন্ত্রীরা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে সমর্থন করেন, যা কমিউনিজমের বিপরীত। ইমিগ্রেশন আইনজীবী ম্যাককিনি বলেন, ডিএসএ সদস্যপদ কোনো নাগরিকত্ব বাধা নয়। এ ছাড়া, বৈধ রাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ না করাও প্রতারণা নয়, যদি তা আবেদন বাতিলের কারণ না হয়।
সূত্র : আলজাজিরা। 

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর