নেই কোনো নিয়মিত মশা নিধন বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শহর পেরিয়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। সরকারি হিসাবে চলতি বছরে বরগুনা জেলায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ জন মারা গেছেন। তবে বরিশাল ও ঢাকায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে আরও অন্তত ৩৯ জন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ জনে।
বুধবার পর্যন্ত বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭,৫১৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭,৩৬২ জন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
সবচেয়ে বিপদে রয়েছে পাথরঘাটা। মাত্র দুই দিনে সেখানে মারা গেছেন ৬ জন। এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। মানুষ বলছে, ডেঙ্গুতে বাঁচবো তো?
বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের মনসাতলী গ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সারা বছর জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এলাকা পরিচিতি পেয়েছে ‘ডেঙ্গু কলোনি’ নামে।
তবে এখানেও নেই কোনো নিয়মিত মশা নিধন বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
স্থানীয় বাসিন্দা ছগির বলেন, “পৌরসভা বা ইউনিয়নে যারা দায়িত্বে আছেন তারা ভোটের রাজনীতি করেন না, তাই জনগণের কষ্ট বোঝেন না।”
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জুন মাসে বরগুনায় একটি জরিপ চালায়। সেখানে দেখা যায়, বরগুনা পৌর এলাকায় ৩১% আর সদর উপজেলার গ্রামে ৭৬% বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। যেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ব্রুটো ইনডেক্স ২০ হলে এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়, সেখানে বরগুনার গ্রামগুলোতে এই সূচক ১৬৩ – যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, “নতুন রোগীর বেশিরভাগই আসছেন গ্রামাঞ্চল থেকে। সচেতনতা ছাড়া এর মোকাবিলা সম্ভব নয়।”
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, “কিছুদিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল, কিন্তু এখন আবার বাড়তে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।”
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি সামাজিকভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার লার্ভা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এখনই দরকার জনগণের সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম।







