বরগুনার উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি চরম জনবল সংকটে পড়েছে। প্রায় দুই লাখ মানুষের ভরসার জায়গা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র একজন। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন, অনেকে বাধ্য হয়ে ধার-করজ করে বরিশাল, খুলনা বা ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় সেলিম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “গত বছর মেয়াডা অসুস্থ হইলে কিস্তি কইরা বরিশাল চিকিৎসা করাইতে হইছে। গরিব মানুষরে চিকিৎসা নাই, আমরা নাপা খাইয়া ঘরে বইসা থাকি।”
২০০৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন কিছুদিন চিকিৎসক সংখ্যা বাড়লেও, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ১৫ জন চিকিৎসক ছিলেন, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র একজনে।
জনবল না থাকার কারণে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ নেই, ফলে সেগুলো অচল হয়ে পড়ছে। এই সংকটের কারণে প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বা বরিশালে রেফার হচ্ছেন, যা উপকূলীয় দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিকিৎসকদের কর্মস্থলে ঠিকভাবে না থাকার অভিযোগও রয়েছে। যেমন, পাথরঘাটায় কর্মরত এক চিকিৎসক ডা. রাফিউল হাসান মাসে কয়েকদিনের বেশি আসেন না, আবার কখনও মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকেন। তবুও তার চাকরি বহাল রয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর নতুন করে তিনজন চিকিৎসককে পাথরঘাটায় নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে যোগদানের কথা থাকলেও, এখনো তারা কেউ কাজে যোগ দেননি।
হাসপাতালের এমার্জেন্সি অ্যাটেনডেন্স মনজিরুল আলম জানান, এখানে তার পদের পাশাপাশি আরও দুইজন থাকার কথা থাকলেও তিনি একাই কাজ চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, “প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ জন রোগী আসে, আমি একা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করি। ওয়ার্ড বয়কে নিয়ে কোনোভাবে সামলাই।”
রোগীদের দুর্ভোগ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, “প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াইশো রোগী আসে, কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তারা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। দ্রুত জনবল নিয়োগ দিলে মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে আসবে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা সীমিত সামর্থ্যে রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ২৪ ঘণ্টা এমার্জেন্সি চালু রেখেছি, কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
বরগুনার সিভিল সার্জন প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল জানান, পাথরঘাটায় ৩৭টি ডাক্তার পদের মধ্যে মাত্র ২ জন কর্মরত আছেন। নতুন ৩ জন ডাক্তার অর্ডার পেয়েছেন, তারা যোগ দিলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জনবল সংকটের কারণে পাথরঘাটার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।







