১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

বিশ্বের ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপ্রধানরা

বিশ্বের ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপ্রধানরা

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

ইতিহাসজুড়ে নেতাদের পতন অনেক সময়ই সহিংস হয়েছে। তবে রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বিরল ও নাটকীয় ঘটনার মধ্যে অন্যতম হলো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের আনুষ্ঠানিক মৃত্যুদণ্ড বা বিচারিক মৃত্যুদণ্ড। সাধারণত বিপ্লব, অভ্যুত্থান, গৃহযুদ্ধ বা গণঅপরাধের বিচারের পর এ ধরনের ঘটনা ঘটে। ইতিহাসে এমন অনেক রাজা, একনায়ক ও নির্বাচিত নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে বা মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন এবং অনেকের ক্ষেত্রে কয়েক দশক পর আদালত পুনরায় রায় পর্যালোচনা করেছে।
নিকোলায় চাউশেস্কু

১৯৬৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৪ বছর রোমানিয়ার শাসক ছিলেন নিকোলায় চাউশেস্কু। এর পর রোমানিয়ার কমিউনিস্ট শাসন ভেঙে পড়ার সময় ১৮৮৯ সালে চাউশেস্কু ও তার স্ত্রীর দ্রুতগতির এক সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়। গণহত্যা ও অর্থনৈতিক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের দায়ে তারা দোষী সাব্যস্ত হন এবং বড়দিনের দিন তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আধুনিক রোমানিয়ার ইতিহাসে এটিই ছিল শেষ মৃত্যুদণ্ড।
জুলফিকার আলি ভুট্টো

১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো। এরপর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পাকিস্তানের এই ক্যারিশমাটিক নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং এক বিতর্কিত হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
তবে ২০২৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট তার বিচারকে মারাত্মকভাবে ত্রুটিপূর্ণ ঘোষণা করে — যা এক যুগান্তকারী মরণোত্তর পুনর্বাসন।

সাদ্দাম হুসেইন

সাদ্দাম হুসেইন ১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইরাকের ক্ষমতায় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র–নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর সাদ্দাম হুসেইনের বিরুদ্ধে দুজাইল গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইরাকি ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়। দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। এটি ছিল আধুনিক কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সবচেয়ে আলোচিত মৃত্যুদণ্ডগুলোর একটি।
মুয়াম্মার গাদ্দাফি 

লিবিয়ার ৪২ বছরের শাসক গাদ্দাফি ২০১১ সালে ক্ষমতা চ্যুত হন। আদালতের রায় না থাকলেও আটকের পর গাদ্দাফিকে তাৎক্ষণিক হত্যা করা হয়। যা বৈশ্বিক বিতর্ক সৃষ্টি করে। এই পতনের মধ্য দিয়েই ৪২ বছরের একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং লিবিয়া বিভক্ত অবস্থায় পড়ে।

মেংগিস্তু হাইলি মারিয়াম

ইথিওপিয়ার মার্কসবাদী দার্গ শাসনব্যবস্থার এই সাবেক নেতা ‘রেড টেরর’–এর সঙ্গে যুক্ত গণহত্যা ও নৃশংসতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তবে তিনি জিম্বাবুয়েতে নির্বাসনে বসবাস করছেন এবং তাকে কখনো প্রত্যর্পণ করা হয়নি।

চুন দু–হোয়ান 

দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতন্ত্র ফেরার পর সামরিক শাসকদের বিচার করা হয়। দেশটিকে ৮ বছর শাসন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট চুন দু–হোয়ান। ১৯৭৯ সালে তার করা অভ্যুত্থান ও গওয়াংজু দমন–পীড়নের দায়ে চুনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়। তবে পরে তা মওকুফ করা হয় এবং তিনি শেষ পর্যন্ত ক্ষমা পান।
জোসেফ কাবিলা

২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিআর কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ছিলেন জোসেফ কাবিলা। ২০২৫ সালে একটি সামরিক আদালত কাবিলাকে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদ্রোহ এবং পূর্ব কঙ্গোর সংঘর্ষ–সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি এটি। যদিও তিনি গ্রেপ্তার হননি এবং তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতার পর রাষ্ট্রপ্রধানদের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ইতিহাসে বহুবার ঘটেছে। ফরাসি বিপ্লব থেকে ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধ, ইরাক ও রুমানিয়ার শাসনব্যবস্থার পতন কিংবা ঘানার অভ্যুত্থান বিভিন্ন সময় বিশ্ববাসী এ ধরণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। 

তবে এসব বিচারের প্রকৃতি দেশভেদে ব্যাপকভাবে ভিন্ন— কোথাও কাবিলার মতো দীর্ঘ ও বিস্তৃত বিচার হয়েছে, আবার কোথাও ভুট্টো, চাউশেস্কুর মতো দ্রুত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার সমালোচিত হয়েছে। তবে বিচার, প্রতিশোধ বা ট্র্যাজেডি—যেভাবেই দেখা হোক না কেনো, প্রতিটি মৃত্যুদণ্ড একটি যুগের অবসান এবং আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনার ইঙ্গিত।

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর