১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

ভাঙা হাড়ে দ্রুত আরাম, সার্জারি ছাড়া কয়েক মিনিটেই সম্ভব

ভাঙা হাড়ে দ্রুত আরাম, সার্জারি ছাড়া কয়েক মিনিটেই সম্ভব

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

ছবি: সংগৃহীত

ভাবুন তো, মারাত্মকত কোনো দুর্ঘটনায় আপনার হাত বা পা ভেঙে গেছে; কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই হাড় আবার জোড়া লেগে গেল এক আঠার সাহায্যে! এটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও, চীনা বিজ্ঞানীরা ঠিক এমনই এক যুগান্তকারী বোন গ্লু তৈরি করেছেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এই আঠার নাম দেওয়া হয়েছে Bone-02 (বোন-০২)। ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ফ্যান শুনউ ও ড. লিন শিয়ানফেং-এর নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এই আঠা তৈরি করেছেন। এটি মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ভাঙা হাড় মেরামত করতে পারে, যার জন্য কোনো রকম জটিল সার্জারির প্রয়োজন হবে না।

এই আঠার উদ্ভাবনের পেছনেও রয়েছে এক অদ্ভুত অনুপ্রেরণা । বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, সমুদ্রের ঢেউ আর নোনা জলের মধ্যেও ঝিনুক কীভাবে শক্তভাবে পাথর বা সেতুর স্তম্ভে আটকে থাকে। সেই প্রাকৃতিক নকশা মাথায় রেখেই গবেষকরা এমন এক আঠা তৈরি করেন, যা রক্তভেজা শরীরের ভেতরেও নিখুঁতভাবে কাজ করতে সক্ষম।

অধ্যাপক ফ্যান শুনউ জানান, গত একশো বছর ধরে বিজ্ঞানীরা হাড় জোড়া লাগানোর উপযোগী আঠা তৈরির চেষ্টা করেও জৈবিক নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় শক্তির কারণে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। কিন্তু Bone-02 সেই সীমা ভেঙে দিয়েছে। মাত্র দুই থেকে তিন মিনিটেই এটি এমন শক্ত বন্ধন তৈরি করে, যা ১৮০ কিলোগ্রামেরও বেশি চাপ সহ্য করতে সক্ষম। এমনকি একবার লাগলে হাতুড়ির বাড়ি দিয়েও এই বন্ধন আলাদা করা প্রায় অসম্ভব।

আগে যেখানে হাড় জোড়া লাগাতে বড় করে কেটে স্ক্রু ও ধাতব প্লেট বসাতে হতো, এখন চিকিৎসকরা মাত্র দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার ছোট একটি ছিদ্র করেই এই গ্লু ইনজেক্ট করতে পারেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাড় এমনভাবে জোড়া লাগে, দেখে মনে হয় যেন ভাঙেইনি কখনো।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই আঠা শরীর নিজেই শুষে নেয়। ছয় মাসের মধ্যে যখন হাড় পুরোপুরি সেরে ওঠে, তখন সেই আঠার কোনো চিহ্নই শরীরে থাকে না। ফলে দ্বিতীয়বার সার্জারির সময়, খরচ ও ঝামেলা অনেকটাই কমে আসে। ইতিমধ্যেই দেড়শ জন রোগীর শরীরে এই আঠা ব্যবহার করে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি দ্রুত হাড় জোড়া লাগিয়ে জীবনরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়। 

নতুন প্রযুক্তি এবং নন-ইনভেসিভ চিকিৎসা পদ্ধতি হাড়ের আরাম দ্রুত দেয় এবং সার্জারির ঝুঁকি কমায়। তবে, হাড়ের ধরন ও অবস্থার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। সব রোগীর ক্ষেত্রে এটি সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে, তাই পেশাদার চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা মেনে চলা সবচেয়ে নিরাপদ।

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর