১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

সারা দেশে আ’লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে জনজীবনে স্থবিরতা: উত্তপ্ত রাজনীতি

সারা দেশে আ’লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে জনজীবনে স্থবিরতা: উত্তপ্ত রাজনীতি

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

ছবিঃ ঢাকা লকডাউন (প্রতিকী ছবি)

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর ২০২৫: কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে জনজীবনে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। যদিও সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তবুও সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ঘরবন্দী থাকায় রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা।


​জনজীবন ও পরিবহন ব্যবস্থায় প্রভাব
​আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তার আংশিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।


​পরিবহন ব্যবস্থা: রাজধানী ঢাকার সড়কগুলোতে গণপরিবহন এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় নগণ্য। দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক স্থানে বাস পোড়ানো ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে


​বাজার ও অফিস: আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অধিকাংশ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এতে করে দৈনন্দিন কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।


​শিক্ষক আন্দোলন: চলমান শিক্ষক আন্দোলন, যার ন্যায্য দাবি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তা এই রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ে ব্যাপকতা পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই আন্দোলন রাজনৈতিক ফায়দা তোলার ক্ষেত্রে কৌশলগত হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।


​পাল্টা কর্মসূচি ও রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা
​আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচির মোকাবিলায় ‘জুলাই ঐক্য’-এর ব্যানারে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা ১৩ নভেম্বর দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
​’জুলাই ঐক্যের’ মুখ্য সংগঠক মোসাদ্দেক ইবনে মোহাম্মদ জানিয়েছেন, খুনি হাসিনার ফাঁসি এবং ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে তারা রাজপথে সক্রিয় থাকবেন।
​আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা ও নাশকতা রোধে কঠোর হয়েছে। যেকোনো ব্যক্তি নাশকতার সঙ্গে জড়িত—এমন সন্দেহে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


​আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও কৌশল
​প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের ভেতরে এই ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। জানা গেছে, দলটির এক পক্ষ এটিকে ক্ষমতা দখলের একটি কৌশল হিসেবে দেখছে, যেখানে অর্থ ও তরুণদের ব্যবহার করে দেশে থাকা সন্ত্রাসী ও টোকাইদের দিয়ে হামলার ছক কষা হচ্ছে। তবে অন্য একটি পক্ষ মনে করছে, এই সময়ে সহিংসতা হিতে বিপরীত হতে পারে।


​১৩ নভেম্বর ঘিরে উত্তেজনা
​১৩ নভেম্বরের এই ‘লকডাউন’ কর্মসূচি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে, কারণ এই দিন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই কর্মসূচি মূলত ক্ষমতার প্রতীকায়ন, মাঠে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন এবং রাজনৈতিক পুনঃঅবস্থান নির্ধারণের একটি কৌশল।


​স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫০ শতাংশ সদস্যকে মাঠ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না।
​এই পরিস্থিতি জনমনে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যার ফলে দেশের অর্থনীতি এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর