অজিত কুমার। ইনস্টাগ্রাম থেকে
তামিল সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় তারকা তিনি। ৫৪ বছর বয়সেও এসে একের পর এক সুপারহিট ছবি দিয়ে যাচ্ছেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালে বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিলেন ‘বালিমাই’, ‘থুনিবু’র মতো সিনেমা দিয়ে। তিনি আর কেউ নন, অজিত কুমার। জনপ্রিয় এই তারকার জীবনযাপনের ক্ষেত্র ব্যতিক্রম। এই সময়ে এসেও ব্যবহার করেন না মুঠোফোন! দেন না সাক্ষাৎকারও। তবে সম্প্রতি হলিউড রিপোর্টার ইন্ডিয়াকে এক দীর্ঘ ভিডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। যেখানে কথা বলেছেন ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা জানা-অজানা প্রসঙ্গ নিয়ে।
দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয়তম তারকাদের একজন অজিত কুমার শুধু অভিনেতা নন, পূর্ণকালীন রেসিং ড্রাইভারও বটে। সম্প্রতি হলিউড রিপোর্টার ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে অজিত কথা বলেছেন তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ার, খ্যাতির চাপ ও পরিবার নিয়ে।
‘শুরুতে ঠিকমতো তামিলও বলতে পারতাম না’
নিজের শুরুর দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে অজিত জানান, অভিনয়ে আসার শুরুতে তামিল ভাষাটাই ভালোভাবে বলতে পারতেন না। ‘আমার তামিল বলায় উচ্চারণের সমস্যা ছিল। অনেকে বলেছিল নাম বদলাতে, কারণ “অজিত” নাকি খুব প্রচলিত নাম নয়। কিন্তু আমি বলেছিলাম, আমি আমার নিজের নামই রাখব। নাম বদলে সফল হতে চাই না,’ বলেন তিনি।

অজিত কুমার। ইনস্টাগ্রাম থেকে
এই অভিনেতা বলেন, তাঁর সাফল্যের পেছনে কেবল একটাই জিনিস কাজ করেছে—কঠোর পরিশ্রম। “আমি আমার সবটুকু দিয়েছি। অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, কিন্তু আমি থামিনি। সিনেমা হোক বা রেসিং—দুটি ক্ষেত্রেই সফল হতে গেলে সঠিক টিম আর অদম্য আগ্রহ দরকার। আমি ভাগ্যবান যে দারুণ সব পরিচালক, প্রযোজক, টেকনিশিয়ানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি,’ বলেন তিনি।
‘আমার শরীরে ২৯ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে’
অজিত জানান, তাঁর সিনেমাজীবনের চড়া মূল্য তাঁকে নিজের শরীর দিয়েই দিতে হয়েছে। ‘আমার শরীরে এখন পর্যন্ত ২৯ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। অনেক সময় ভাবতাম, আর পারব না; কিন্তু থামিনি। আজও আমি নতুন ছেলের মতো পরিশ্রম করি, যেভাবে ১৯ বছর বয়সে কেউ স্বপ্নের জন্য লড়াই করে,’ বলেন তিনি।

পরিবারের সঙ্গে অজিত কুমার। ইনস্টাগ্রাম থেকে
‘শালিনী না থাকলে সব ভেঙে পড়ত’
অজিত অকপটে স্বীকার করেন, তাঁর সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাঁর স্ত্রী শালিনীর। ‘আমি মোটেও সহজ মানুষ নই। শালিনী অনেক কষ্ট সহ্য করেছে, তবু সব সময় পাশে থেকেছে। সন্তানেরা জন্মানোর আগে সে আমার সঙ্গে রেস ট্র্যাকে যেত। সত্যি বলতে, ওর সমর্থন না থাকলে আমি আজ এই জায়গায় থাকতে পারতাম না,’ বলেন এই অভিনেতা।
খ্যাতির মাশুল
খ্যাতি নিয়ে অজিতের অনুভূতিও বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে। তিনি বলেন, ‘খ্যাতি যেমন স্বাচ্ছন্দ্য দেয়, তেমনি অনেক কিছু কেড়ে নেয়। আমি বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই থাকি। কারণ, বাইরে বেরোলেই ভিড় জমে যায়। ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাইনি কত দিন! কিছু স্কুল তো বিনয়ের সঙ্গে বলেছে, আমি যেন না যাই। কারণ, উপস্থিতি জনসমাগম ঘটায়। পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক সময় কাটাতে পারি না।’

অজিত কুমার। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
‘খ্যাতি যা দেয়, তার চেয়ে বেশি কেড়ে নেয়’
অজিতের ভাষায়, ‘আমি ভক্তদের ভালোবাসার জন্য কৃতজ্ঞ, কিন্তু সেই ভালোবাসাই আমাকে আমার প্রিয় মানুষদের কাছ থেকে দূরে রাখে। আর এটাই খ্যাতির বাস্তবতা।’
বেশির ভাগ তারকাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ছবির খবর তো বটেই, তারকাদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ঢুঁ মারলে জানা যায় তাঁদের যাপিত জীবনের অনেক কিছুই। কিন্তু এখানেও ব্যতিক্রম অজিত কুমার। ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট নেই তাঁর। ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন তাঁর ম্যানেজারের টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। প্রযুক্তির এত বাড়বাড়ন্ত পছন্দ নয় অজিত কুমারের। শুটিং ছাড়া বাকি সময় নীরবে-নিভৃতে কাটাতে পছন্দ করেন তিনি।

অজিত কুমার। অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রায় সব দক্ষিণি তারকারই বড় ভক্ত-সমর্থক গোষ্ঠী আছে। কিন্তু ফ্যান ক্লাবের ধার ধারেন না এই অভিনেতা। তাঁর মতে, ফ্যান ক্লাব তাঁর নাম ব্যবহার করে এমন অনেক কাজ করে, যা তিনি সমর্থন করেন না। সে জন্যই ২০১১ সালে তাঁর ফ্যান ক্লাবের বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
অভিনেতা ছাড়াও অজিত কুমার একজন রেসিং ড্রাইভারও বটে। ভারত ও ভারতের বাইরে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি।







