২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

৪৩ মিনিটের বৈঠক, নানা কৌতূহল

৪৩ মিনিটের বৈঠক, নানা কৌতূহল

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের আকস্মিক সাক্ষাৎ রাজনৈতিক মহলে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। এটিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার খোঁজ নিতে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ বলা হলেও ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ মনে করছেন বিশ্লেষক-রাজনীতিকসহ অনেকে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য শিগগিরই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। অসুস্থতার কারণে তিনি দীর্ঘদিন গুলশানের বাসভবন ফিরোজার চার দেয়ালের মধ্যে রয়েছেন। মাঝেমধ্যেই চিকিৎসাসেবা নিতে তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়। এর মধ্যেই সেনাপ্রধান সস্ত্রীক তাঁর বাসায় গেলেন।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলোর তথ্যমতে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বৈঠক হয় ৪৩ মিনিটের মতো। খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন সেনাপ্রধান। সাক্ষাতের সময় ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী সারাহনাজ কমলিকা জামানও ছিলেন।

অনেকটা আকস্মিক সাক্ষাতের বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। রাজনীতি বোদ্ধারা এটাকে শুধু সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছেন না। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেনাপ্রধানের দেখা করার ঘটনাটি তাই ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে।

সাক্ষাতের ব্যাপারে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এটা জানায়, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে এটা একান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ।

দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি খালেদা জিয়া ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন মুক্তি পান। সর্বশেষ ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর। তিনি সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে ফিরোজায় এসেছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এ সময় সেনাপ্রধানের স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টা থেকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক ৪৩ মিনিট স্থায়ী হয়। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তাদের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি সেখানে আসন্ন নির্বাচন থেকে শুরু করে রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্ন অনেকের মধ্যে রয়েছে।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজার দোতলায় থাকেন। সেখানেই তিনি আগত অতিথিদের সঙ্গে দেখা করেন। তবে সেনাপ্রধান ফিরোজায় পৌঁছার পর বাসার নিচতলার কনফারেন্স রুমে নেমে আসেন তিনি। স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেন না বলে তাঁকে হুইলচেয়ারে করে নামানো হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেনাপ্রধান ও তাঁর স্ত্রী গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করেন। সাক্ষাতের সময় খালেদা জিয়া, ফজলে এলাহি আকবর এবং সেনাপ্রধান ও তাঁর স্ত্রী ছিলেন। এর আগে সেনাপ্রধানের সাক্ষাতের বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বাসায় নাশতা তৈরি করে রাখা হয়।

বৈঠকের নেপথ্যে কী ধরনের আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে, তা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে। কারণ, প্রতিদিনই নানা ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনীতির মাঠে ধীরে ধীরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দীর্ঘদিনের পুরোনো মিত্রতা থাকলেও কথার মারপ্যাঁচে একে অন্যকে আক্রমণ করছে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, সংবিধান পরিবর্তন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিবাদের জায়গাও স্পষ্ট। এসব নিয়ে আগামী নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি অনেক ধরনের নাটকীয় মোড় নিতে পারে বলে কারও কারও ভাষ্য। আবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘদিন লন্ডনে অবস্থান করছেন। এখনও দেশে ফেরেননি তিনি। নানামাত্রিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে সময় যখন পার হচ্ছে, ওই সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মারুফ মল্লিক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেখা করেছেন। এর এক ধরনের বার্তা হচ্ছে– সম্ভবত নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়ে গেছে। এটা ডিসেম্বর বা এর আগেও হতে পারে বা পরেও হতে পারে। কিন্তু দ্রুতই নির্বাচন হবে।’ কয়েকটি দলকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও লেখেন, বাস্তবতা মেনে নাও। নির্বাচন পেছাবে না।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সমকালকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ অবশ্যই সৌজন্য। কারণ, খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, একজন সেক্টর কমান্ডার, সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং তাঁর মর্যাদা অন্য যে কারোর চেয়ে বেশি। সেখানে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠান বর্তমান সেনাপ্রধানের অবশ্যই ভদ্রতার মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া আমরা দেশকে যেভাবে পরিবর্তন করতে চেয়েছি, সংস্কার করতে চেয়েছি, পেছনের জঞ্জালকে ফেলে দিতে চেয়েছি; তার উদাহরণও এই সাক্ষাৎ।

বিএনপির কোনো কোনো নেতার ভাষ্য, এতদিন যারা ওয়ান-ইলেভেনের মতো ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়নের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, তারা একটু হলেও ধাক্কা খাবেন।

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর