১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

দুশ্চিন্তায় উপকূলের জেলেরা , মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ।

দুশ্চিন্তায় উপকূলের জেলেরা , মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ।

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় মধ্যরাত থেকে বন্ধ হচ্ছে মাছ শিকার। ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। চলতি মৌসুমে একাধিক সামুদ্রিক ঝড়ে দিশেহারা জেলেরা নিষেধাজ্ঞা রক্ষায় সচেষ্ট থাকলেও ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকার নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলেরা।

মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন বরগুনাসহ উপক’লের নদ-নদী ও সাগরে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

বরগুনা উপকূলের জেলেরা জানান, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের এমন নির্দেশনা মেনে চলবেন তারা। তবে সাগরে না যাওয়ায় আর্থিক অনটনে ভুগবেন তারা। তাছাড়া চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

তারা আরও বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত একাধিকবার দুর্যোগের কবলে পড়ে এবং মাঝখানে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সাগরে ঠিক মতো জাল ফেলতে না পারায় কাঙ্খিত ইলিশ আহরণ করতে পারেননি জেলেরা। ফলে অধিকাংশ ট্রলার মালিক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা রয়েছেন লোকসানে।

সাগর থেকে ফিরে ট্রলারের মাঝি রতন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুনে যখন ফিরছিলাম তখনই দেখলাম শত শত ভারতীয় ট্রলার মাছ ধরছে এরকম প্রতি বছর তারা বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যদি এভাবে তারা ধরে থাকে তাহলে তো আমরা কোনো বছরই মাছ পাবো না তাই সরকারের কাছে দাবি জানায় ভারতীয় জেলেরা যেন আমাদের জলসীমায় প্রবেশ না করে। এমনিতেই এবছর আবহাওয়া খারাপ ছিল সাগরে মাছ শিকার করতে পারিনি।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসেব অনুযায়ী বরগুনায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৬ হাজার। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা লক্ষাধিক। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় জেলেদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৬ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। চাল বিতরণেও রয়েছে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ।

অনেক জেলেদের অভিযোগ, সরকার নামমাত্র ২৫ কেজি চাল সহায়তা দিলেও তা অধিকাংশ জেলে পান না । আবার অনেকে জেলে নন, তারাও এ সহায়তা পাওয়ায় প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হন ।

জেলে শামীম মাঝি বলেন, ইলিশ ধরা ২২ দিন নিষেধ, সরকারের সব নিয়ম আমরা মেনে চলি কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে ভারতীয় জেলেরা আমাদের জলসীমায় জাল পেতে মাছ শিকার করে যাচ্ছে, বাংলাদেশে যখন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে, এ সময় ভারতের জেলেরা অবাধে সাগরে মাছ শিকার করেন। আমরা চাই আমাদের সঙ্গে ওই দেশেরও মাছ শিকার বন্ধ থাকবে।

জেলে আলম বলেন, ২০ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরি জেলে কার্ড আছে কিন্তু সময়মতো কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। ২০ কেজি ২৫ কেজি চাল পাই এতে আমার সংসার চলে না। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও মা-বাবার ওষুধের খরচ দিতে হয়। গেল বছর এনজিও থেকে লোন নিয়েছিলাম সেটা এখন পর্যন্ত শোধ করতে পারিনি এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছি।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন , শুধু মা ইলিশ রক্ষা করলেই হবে না। জেলেদের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। জেলেদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত যে চাল দেয়া হয় এতে তাদের সংসার চালানো সম্ভব নয়। চালের পাশাপাশি নগদ অর্থও দিতে হবে। অন্যথায় তারা ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়বেন।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, মো: মহসীন বলেন, বরগুনার বিষখালী, বুড়ীশ্বর,(পায়রা) বলেশ্বর নদীর ৪০টি পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।, ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ ধরা বিক্রি ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এই সব পয়েন্টে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ মা ইলিশ ধরলে কিংবা, মজুদ, বিক্রি করলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নদীতে ও সাগরে পাহারায় থাকবে। নৌ-পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর