১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

সাভারে ড্যাফোডিল-সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ: বাসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও বহু আহত

সাভারে ড্যাফোডিল-সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ: বাসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও বহু আহত

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

ছবি সংগৃহীতঃ ডেফোডিল এ আগুন

সাভার (ঢাকা): তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (DIU) এবং সিটি ইউনিভার্সিটির (City University) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দিবাগত রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলা এই সংঘাতে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে থাকা বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও প্রশাসনিক ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে, যার নেপথ্যের কারণ হিসেবে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে দায়ী করা হচ্ছে।
​সংঘর্ষের সূত্রপাত ও রহস্য:
​পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ভয়াবহ সংঘর্ষের সূত্রপাত একটি অত্যন্ত সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে। রবিবার সন্ধ্যায় সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল থেকে অসতর্কতাবশত থুথু এসে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর গায়ে পড়ে। এই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়।
​প্রাথমিক পর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হলেও, পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের একটি ভাড়া করা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এরপর এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং উত্তেজনা চরমে ওঠে।
​অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুর:
​উত্তেজিত ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা এরপর সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের দিকে অগ্রসর হন। একপর্যায়ে তাঁরা সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা তিনটি বাস, একটি প্রাইভেট কার ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, আরও কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয় এবং কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুটের অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষের সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ভোররাত পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে।
​ক্ষয়ক্ষতি ও আহত:
​রাতভর চলা এই সংঘর্ষে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার অভিযোগ করেছেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা “পরিকল্পিতভাবে” তাদের ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়েছে এবং সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
​আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি:
​দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চললেও, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো যথাযথ সহায়তা তারা পাননি। ভোররাতে খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। বর্তমানে এলাকাটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
​কর্তৃপক্ষের বক্তব্য:
​ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আর কবির সকালে এ ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করে জানান, আপাতত তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কাজ করছেন। তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ঘটনার মূল কারণ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না। অন্যদিকে সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আকতার হোসেন গভীর রাতে সাংবাদিকদের কাছে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “সব শেষ করে ফেলেছে।”
​এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসের আশেপাশে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি উঠেছে।

,

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর