শ্যামলী রিং রোড সম্প্রতি ঢাকার অন্যতম ফ্যাশন হাব
সম্প্রতি কেনাকাটা বা খাওয়াদাওয়া করতে কি শ্যামলী রিং রোড গিয়েছেন? না গিয়ে থাকলে কিছুটা অবাকই হবেন বটে। রাস্তার দুই পাশে বড় বড় বিল্ডিংজুড়ে আছে রেস্তোরাঁ, শপিং মল থেকে শুরু করে নামীদামি ব্র্যান্ডের দোকান। বছর তিন বা চারেক আগেও সন্ধ্যা নামলেই বেশ নিরিবিলি হয়ে পড়ত যেই শ্যামলী রিং রোড, রাতের আলোকচ্ছটা পেলে এখন দেখা যায় অন্য এক রূপ।
মুনতাসীর মামুনের ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী (দ্বিতীয় খণ্ড) থেকে জানা যায়, একসময় প্রচুর গাছপালা থাকার কারণে এ এলাকার নামকরণ হয় শ্যামলী। মিরপুর রোডের পাশ দিয়ে মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি যেতে শ্যামলীর যে অংশটুকু পড়ে, সেই রাস্তাটুকু জনপ্রিয় হয় শ্যামলী রিং রোড নামে। পরে শ্যামলী সিনেমা হলের কারণেও এই এলাকা পরিচিতি পায়।
যদিও এখন আর হলটি নেই। সেখানে গড়ে ওঠে অত্যাধুনিক শপিং মল শ্যামলী স্কয়ার। এর মধ্যে আছে স্টার সিনেপ্লেক্স। নতুন নতুন বেসরকারি অফিস ও কন্ডোমিনিয়াম আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠার কারণে বদলে গেছে শ্যামলীর আদিরূপ

ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোর অন্দরসজ্জাও চোখে পড়ার মতো
সম্প্রতি ঢাকার অন্যতম ফ্যাশন হাবও যেন শ্যামলী রিং রোড। কী নেই এখানে! রাস্তার দুই ধারে আছে ইনফিনিটি, ইয়েলো, টুয়েলভ, সারা, লা রিভ, আর্টিসানসহ দেশের অন্য সব নামীদামি ব্র্যান্ডের দোকান। তেমনি রাস্তার ফুটপাতেও পেয়ে যাবেন নানা পণ্য। খাবারের দোকানেও মিলবে বৈচিত্র্য।

ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে হোগলা, বাঁশ, বেতের তৈরি পণ্য
মূলত সন্ধ্যার পরপরই জমজমাট হয়ে ওঠে শ্যামলী রিং রোডের এই রাস্তা। শুধু কেনাকাটা করতেই নয়, স্ট্রিট ফুডের স্বাদ নিতেও অনেকে আসেন। জাপান গার্ডেন সিটির সামনে থেকে টোকিও স্কয়ার পর্যন্ত থাকে জমজমাট স্ট্রিট ফুডের আয়োজন। পাহাড়ি দোকান হেবাংয়েও সন্ধ্যার পর দেখা গেল ব্যাপক ভিড়।
হেবাংয়ের স্বত্বাধিকারী বিপলি চাকমা জানালেন, সাধারণত অফিসফেরত মানুষজন পরিবার নিয়ে সন্ধ্যার পর এখানে খেতে আসেন। বেশ রাত পর্যন্ত থাকে ক্রেতাদের আনাগোনা। ছুটির দিনে এলে ভিড় এত বেশি থাকে যে আগে থেকে বুকিং দিয়ে আসেন অনেকে। ক্রেতা সামলাতে ব্যস্ত থাকে ফুডকোর্টগুলোও। টাইম স্কয়ার ফুডকোর্ট আর শাহাবুদ্দিন মার্কেটের সামনের ফুডকোর্টে গিয়ে তেমনটাই দেখা গেল।

ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের পোশাক
সরকারি ও বেসরকারি আবাসন গড়ে ওঠায় সম্প্রতি শ্যামলী এলাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম বেড়ে গেছে। আবার ধানমন্ডি এলাকায় ছেলেমেয়ে পড়ছে, এমন অনেক পরিবারই এখন তাদের আবাসন বেছে নিচ্ছে শ্যামলীতে। কথা হচ্ছিল কে ক্র্যাফটের কর্ণধার খালিদ মাহমুদ খানের সঙ্গে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে একটি পুরোনো বাড়িকে নতুনভাবে তৈরি করে রিং রোডে নতুনরূপে আসে কে ক্র্যাফট। এটি তাঁদের সবচেয়ে বড় ও নান্দনিক শোরুম। পরিবার নিয়ে সবাই যাতে একটু বাড়ির আবহে কেনাকাটা করতে পারেন, তাই এ আয়োজন।

সন্ধ্যার পর জমে উঠে কেনাকাটা
এদিকে লা রিভের হেড অব মার্কেটিং আফরিনা হাবিব জানালেন, নতুন কোনো শাখা দেওয়ার আগে তাঁরা সেই এলাকা সম্পর্কে গবেষণা করেন যে তাঁদের ক্রেতা কারা বা কী ধরনের পণ্য বিক্রি হবে। এ ভাবনাগুলোও তখন কাজ করে।
আবাসিক এলাকা হওয়ার কারণে ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ক্রেতার সংখ্যা এখানে বেশি বলে জানালেন তিনি। সারা দিন অতটা ভিড়ভাট্টা থাকে না। তবে এই এলাকা মূলত জমে সন্ধ্যার পর, তখন বিক্রিবাট্টা বেড়ে যায় বলে জানালেন ভারগোর বিক্রয়কর্মী ইউসুফ আবদুল্লাহ।
শ্যামলী রিং রোডে বড় বড় ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোর পোশাকের সংগ্রহই নয়, তাদের অন্দরসজ্জাও চোখে পড়ার মতো। আমব্রেলার কথাই যদি বলি, মৌসুম ধরে তাঁদের অন্দরসজ্জায় আনা হয় পরিবর্তন। টুয়েলভ, ইনফিনিটি, সারা প্রতিটি খোলামেলা পরিসরে সাজিয়েছে নিজস্ব শাখাগুলো।
প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিসর বেশ বড় হওয়ার কারণে অন্যান্য এলাকার শাখার চেয়ে তারা অনেকটা খোলামেলা আবহ রাখতে পেরেছে। জানা গেল, সামনেই আড়ং নতুন শাখা খুলবে এখানে।

শাহাবুদ্দিন প্লাজায় খুব সুলভেই মিলবে আপনার পছন্দের পণ্য
কথা বলা শেষ করে যখন আমরা ছবি তুলতে শ্যামলী রিং রোড ধরে হাঁটছিলাম, চোখে পড়ল বেশ কিছু ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে হোগলা, বাঁশ, বেতের তৈরি পণ্য। ভ্যানে এসব পণ্য বিক্রি করছেন, এমন একজন বিক্রেতা করিম মিয়া।
তিনি বলছিলেন, আশপাশে তো বাসাবাড়ি বেশি, তাই এসব পণ্য এখানে খুব চলে। প্রতি সন্ধ্যায় ভ্যানে করে এই জিনিসগুলো বিক্রি করেন।

পাবেন নানা ব্র্যান্ডের দোকান
সবশেষে এত নামীদামি ব্র্যান্ডের ভিড়ে শ্যামলীর অন্য রকম একটা শপিং মলের খোঁজ জানিয়ে যাই, নাম শাহাবুদ্দিন প্লাজা। অনলাইনে কাজ করে এমন অনেক বুটিক হাউসের শোরুম আর স্টুডিও আছে এখানে। যেখান থেকে খুব সুলভেই মিলবে আপনার পছন্দের পণ্য।
কথা হচ্ছিল এখানকার এক নিয়মিত ক্রেতা প্রিয়তা খন্দকারের সঙ্গে, জানালেন, তিনি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করছেন। চাকরির কারণে প্রায়ই পোশাক কিনতে হয় তাঁকে। এই মার্কেটে বেশ সাশ্রয়ী মূল্যেই ফ্যাশনেবল পোশাক পাওয়া যায়। পোশাকের পাশাপাশি ঘর সাজানোর পণ্যও মিলবে এখানে।







