১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

প্রেমিকাকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, সেটা কাবিনে উশুল দেখানো যাবে কি?

প্রেমিকাকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, সেটা কাবিনে উশুল দেখানো যাবে কি?

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

মিতি সানজানাছবি: সংগৃহীত





প্রশ্ন: আমাদের প্রায় সাত বছরের প্রেম। সম্প্রতি দুই বাড়ির লোকজনের মধ্যে বিয়ের কথাবার্তা চলছে। তবে সমস্যা হচ্ছে কাবিনের টাকা নিয়ে। বিয়ের কথা পাকা করতে দুই বাড়ির লোকজন কয়েকবার বসেও কাবিনে এসে আটকে যাচ্ছে।

মেয়ের বাড়ির লোকজন চায় বিয়ের কাবিন হবে ১০ লাখ টাকা। আমার বাড়ির লোকেরা সেটা মানছেন না। আমার বড় ভাইয়ের বিয়েতে কাবিন ছিল ৩ লাখ, বাবা চায় এই বিয়েতে বড়জোর ৪ লাখ টাকা কাবিন হোক। আমি যে চাকরি করি, তাতে ১০ লাখ টাকা কাবিন ধরলে দিতে আমারও খুব অসুবিধা হবে। আমার প্রেমিকাও তার বাড়িতে এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আমার হবু স্ত্রী প্রেম চলাকালে আমার কাছ থেকে তাঁর চাকরিসংক্রান্ত কারণে ৪ লাখ টাকা নিয়েছিল। আমার প্রশ্ন, এই ৪ লাখ টাকা কাবিনে উশুল হিসেবে দেখানো যাবে কি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর: প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি জানিয়েছেন, কাবিনের টাকা নিয়ে আপনাদের দুই পরিবারের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়েছে। মুসলিম আইনে বিয়ে একটি দেওয়ানি চুক্তি। মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী দেনমোহর একটি অন্যতম শর্ত। দেনমোহর স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে পরিশোধযোগ্য আইনি বাধ্যবাধকতা। দেনমোহর অবশ্যই বরের সামর্থ্য বিবেচনা করে নির্ধারণ করা উচিত। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত না, যা তিনি আদায় করতে পারবেন না। বিশাল অঙ্কের দেনমোহর নির্ধারণ করা এখন একটি সামাজিক সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর ফলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। পরে তিনি যখন সেই টাকা পরিশোধ করতে পারেন না, তখন তাঁকে আইনের মুখোমুখি হতে হয়।

কাবিননামা বা নিকাহনামা বিয়ের একমাত্র লিখিত প্রামাণ্য দলিল। বিয়েসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় এর প্রয়োজন হয়। কাজেই আইনগতভাবে দেনমোহরের যে টাকার পরিমাণ কাবিননামায় উল্লেখ থাকবে, সেই টাকা পরিশোধ করতে আইনত আপনি বাধ্য। তাই আপনার পরিবারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির উচিত, আলোচনা সাপেক্ষে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর নির্ধারণ করা, না হলে ভবিষ্যতে আপনাকে ঝামেলায় পড়তে হবে।

দেনমোহরের যে অংশ বিয়ের সময় পরিশোধ (উশুল) করে দেওয়া হয়, সেটা তাৎক্ষণিক দেনমোহর। কাবিননামার ১৫ নম্বর কলামে এ সম্পর্কে বলা আছে। বাকিটা বিলম্বিত দেনমোহর হিসেবে ধরা হয়। তাৎক্ষণিক দেনমোহর স্ত্রী চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। আর বিলম্বিত দেনমোহর বিয়ের পর যেকোনো সময় পরিশোধ করা যায়। তবে বিবাহবিচ্ছেদের পর দেনমোহর অবশ্যই পরিশোধ করতে হয়।

দেনমোহর একটি আইনি ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা, সাধারণত যা নগদ টাকা বা অন্য কোনো অনুমোদিত সম্পদ যেমন সোনা, গয়না বা সম্পত্তি দিয়ে পরিশোধ করতে হয়। ধারের টাকা ও দেনমোহর দুটি ভিন্ন বিষয়। আপনার স্ত্রীর ধার করা টাকা তাঁকে পরিশোধ করতে হবে। এটি দেনমোহর হিসেবে ধরা যাবে না, যদি না উভয় পক্ষ এতে সম্মত হয় এবং কাবিননামায় তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। কাজেই আপনার পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে আলোচনা করে দেনমোহরের পরিমাণ এবং উশুল নির্ধারণ করে নিন। বিয়ে নিবন্ধনের সময় অবশ্যই স্পষ্টভাবে কাবিননামায় সবকিছু উল্লেখ করবেন, ভবিষ্যতে যাতে কোনো সমস্যা তৈরি না হয়।

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর