১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডা ছবি: সংগৃহীত




কটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

প্রতিবেদনের পর স্থানীয় সহযোগিতাও মিলেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও একজন ব্যাংক কর্মকর্তা প্রতিমাকে নিয়মিত সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। ব্যাংক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিমা বিকেএসপিতে যত দিন থাকবেন, তিনি প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দেবেন। কেউ কেউ বিকেএসপিতে গিয়ে সহায়তা দিতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি বলে পরিবার জানায়।

এখনো লড়াই আছে। প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডার প্রতিদিন সকাল ছয়টায় কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে বেলা একটায় ফেরেন ঘরে। কাজে পৌঁছাতে এক ঘণ্টা হাঁটা, ফেরার পথেও একই কষ্ট। যেদিন কাজ মেলে, সেদিন মজুরি ২০০ টাকা। কিছুদিন কাজই থাকে না। অসুস্থ স্বামী শ্রীমন্ত মুন্ডা আর আগের মতো মাঠে যেতে পারেন না। সংসারের ভার তাই মূলত সুনিতার কাঁধেই।

তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে তিন কাঠা জমির ওপর অ্যাসবেস্টারের ছাউনিতে প্রতিমাদের ছোট মাটির ঘর। পাশে জরাজীর্ণ রান্নাঘর। এখানেই থাকেন প্রতিমার মা-বাবা। প্রতিমার বড় বোন পূর্ণিমার বিয়ে হয়েছে। আর প্রতিমা বিকেএসপিতে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছেন এবং জাতীয় দলে খেলছেন।

গত শনিবার দুপুরে প্রতিমাদের বাড়িতে গেলে সুনিতা মুন্ডা বলেন, মেয়ে প্রতিমাই তাঁদের আশা। প্রতিমা একদিন দেশের জন্য খেলবেন, তাঁর জন্য গর্বের সঙ্গে উড়বে বাংলাদেশের পতাকা। বলেন, ‘মেয়ে এখন ভালো আছে, এটাই সবচেয়ে বড় শান্তি।’

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর