১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

প্রাথমিকে সংগীত ও শরীর চর্চা শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল, মিশ্র প্রতিক্রিয়া!

প্রাথমিকে সংগীত ও শরীর চর্চা শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল, মিশ্র প্রতিক্রিয়া!

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা: ৫ নভেম্বর, ২০২৫
​সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নবসৃষ্ট ‘সহকারী শিক্ষক (সংগীত)’ ও ‘সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা)’ পদ দুটি বাতিল করে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫’-এর সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত রোববার (২ নভেম্বর) এই সংশোধিত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় সংস্কৃতি ও শারীরিক শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ আপাতত বন্ধ হয়ে গেল।
​আগস্ট মাসে জারি হওয়া মূল বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) এবং সহকারী শিক্ষক (সংগীত) এই চারটি পদের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু সংশোধিত বিধিমালায় শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদ দুটি রাখা হয়েছে।


​সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ: ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা ও বৈষম্যের আশঙ্কা


​এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সচিব কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।


​পরিকল্পনায় ত্রুটি: সচিব কমিটি মনে করে, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশের ৬৫ হাজার ৫৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৫০০ ক্লাস্টারে শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনাটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ।
​কার্যকর সুফল না আসার আশঙ্কা: এত অল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না।


​বৈষম্যের সৃষ্টি: ক্লাস্টারভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলে একই শিক্ষককে একাধিক (২০টির বেশি) বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যা কাজের সময় ব্যবস্থাপনা (কর্মঘণ্টা ম্যানেজ) অসম্ভব করে তুলবে এবং এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে।

ভবিষ্যতের পথ: তবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরবর্তীকালে অর্থের সংস্থান সাপেক্ষে সকল স্কুলে এরকম নতুন বিষয়ের শিক্ষকের পদ সৃজন এবং সেসব পদে নিয়োগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।


​ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর সমালোচনা
​গত ২৮ আগস্ট নিয়োগ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সংগীত শিক্ষক পদ সৃষ্টির তীব্র সমালোচনা শুরু করে। তাদের দাবি ছিল, সংগীত শিক্ষকের পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামীসহ একাধিক দল এই পদক্ষেপকে ‘ইসলামবিরোধী এজেন্ডা’ আখ্যা দিয়ে বিধিমালা বাতিলের দাবি এবং আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিল।


​শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিন্দা ও প্রতিবাদ
​সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও অধিকারকর্মীরা।


প্রতিবাদ: জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন এই সিদ্ধান্তকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে ‘বাঙালিসহ বাংলাদেশে বসবাসরত সব জাতির শিক্ষা সংস্কৃতির ওপর হামলা’ বলে অভিহিত করেছে। তারা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।


​বিশেষজ্ঞদের মত: শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশে ও প্রযুক্তিনির্ভর নেশা থেকে দূরে রাখতে গান ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সংস্কৃতিচর্চা ও শরীরচর্চা বাদ দেওয়া শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির পরিপন্থী।


​এই পদ বাতিলের সিদ্ধান্তটি প্রাথমিক শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়ন এবং শিশুদের সৃজনশীল ও শারীরিক বিকাশের প্রশ্নে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর