১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ■ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

/

ভর্তি পরীক্ষার সময় মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যা করবেন

ভর্তি পরীক্ষার সময় মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যা করবেন

||

দৈনিক মাটির কণ্ঠ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Print

আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, অনেকে বলে ‘ভর্তি যুদ্ধ’

আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। অনেকে বলে ‘ভর্তি যুদ্ধ’। এ সময়টায় ভীষণ চাপ যায়। একে তো পরীক্ষার দুশ্চিন্তা, তার সঙ্গে যোগ হয় আশপাশের সবার নানা কথা-পরামর্শ-উপদেশ, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, সিদ্ধান্তহীনতা, অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে অনেকে ঘাবড়ে যান। সব সামলে কীভাবে ফোকাস ঠিক রাখব, কীভাবে মাইন্ডফুল থাকব? জানাচ্ছেন পাবনা মানসিক হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাঈম আকতার আব্বাসী

কী কী সমস্যা দেখা যায়

যেকোনো পরীক্ষাই আমাদের চাপে ফেলে। চাপে পড়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ—এ সময়ে খুব স্বাভাবিক। কোথাও যদি সুযোগ না পাই, তাহলে কী হবে, মা বাবা কী বলবে, ভবিষ্যতে কী হবে! এসব ভাবনা মাথায় আসতেই পারে।

  • পড়াশোনায় অমনোযোগ আসতে পারে। একটানা পড়া কঠিন মনে হতে পারে।
  • বন্ধুরা ভালো করছে, ভালো কোচিংয়ে পড়ছে, মডেল টেস্টে ভালো নম্বর পাচ্ছে—এমন তুলনা মনে আসতেই পারে। এতে চাপ আরও বাড়ে। অভিভাবকেরাও অনেক সময় অন্যের সঙ্গে তুলনা করে মনের চাপ বাড়িয়ে দেন।
  • অনেক শিক্ষার্থী এ সময় ঘুমের সমস্যায় পড়েন। রাতে ঘুম হয় না। শরীর ক্লান্ত লাগে। অনেকে আবার দীর্ঘ সময় ধরে ল্যাপটপ বা মুঠোফোন ব্যবহার করেন, এটিও ঘুমের সমস্যার কারণ।
  • মেজাজ খিটখিটে হতে পারে। সামান্য কারণেই রাগ হয়। খুব দ্রুত হতাশ হয়ে পড়তে পারেন।
  • মানসিক চাপের প্রভাব শরীরেও পড়ে। যেমন মাথাব্যথা, পেটে সমস্যা, ক্ষুধা কমে যাও

কোন সমস্যার লক্ষণ কী

নিজের বা বন্ধুর মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে। মন অতিরিক্ত উদ্বেগে আক্রান্ত হলে বুক ধড়ফড়, ঘন ঘন হাত-পা কাঁপা, সহজে ঘাবড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় সব সময় মন খারাপ থাকে। কোনো কিছুতেই আগ্রহ আসে না, কান্না আসে। আবার অনেকের জন্য অনিদ্রাও নিত্যকার বিষয়। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না বা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। দীর্ঘ সময় ক্লাস বা পড়াশোনার কারণে শারীরিক ক্লান্তি আসে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরও থেকে যায়। পড়ায় মনোযোগ দেওয়া যায় না। অনেকেই এ সময় বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চান না। একা থাকতে চান।

ভালো থাকার উপায়

ফোকাস ও মাইন্ডফুলনেস ধরে রাখতে নিচের চর্চাগুলো করতে পারেন—

  • সময় ভাগ করে পড়ুন। পড়ার জন্য নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে নিন। কখন কী পড়বেন, সম্ভব হলে আগেই ঠিক করে নিন।
  • ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন। এক দিনে সব শেষ করার চিন্তা করবেন না। ছোট ছোট লক্ষ্যই পূরণ করার চেষ্টা করুন।
  • নিয়মিত বিশ্রাম নিন। টানা না পড়াই ভালো। সম্ভব হলে এক ঘণ্টা পরপর ১০ মিনিটের বিরতি নিন। ‘পোমোডোরো টেকনিক’ নামে একটি পদ্ধতিও অনুসরণ করতে পারেন। এই পদ্ধতি বলে—একটি টাইমার ব্যবহার করে টানা ২৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, তারপর ৫ মিনিট বিরতি নিন, তবে ৫ মিনিট বিরতি মানে কিন্তু ৫ মিনিট রিলস দেখা নয়।
  • যখনই চাপ বোধ হবে, চোখ বন্ধ করে কয়েকবার গভীর শ্বাস নিন। শ্বাসসংক্রান্ত ব্যায়াম ইউটিউব থেকে শিখে নিতে পারেন। এটি মন শান্ত করবে।
  • পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি। ঘুম মস্তিষ্ককে সতেজ করে।
  • স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে নজর দিন। ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। ফল, সবজি বেশি বেশি খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। হাতের কাছে পানির বোতল রাখুন।
  • হাঁটুন, ব্যায়াম করুন প্রতিদিন। অল্প করে হলেও। এতে শরীর ও মন ভালো থাকবে। আবার বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করলে কে কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা নিয়ে আলাপ করতে পারেন।
  • ইতিবাচক চিন্তা করুন। বারবার নিজেকে বলুন, আমি পারব। আত্মবিশ্বাস রাখুন।

এ সময় যা করা উচিত নয়

  • বন্ধু বা অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। সবার পথ আলাদা, প্রস্তুতিও আলাদা।
  • শেষ মুহূর্তে নতুন কিছু পড়ার প্রয়োজন নেই। পরীক্ষার ঠিক আগে নতুন কিছু মুখস্থ করতে যাবেন না। যা আগে পড়েছেন, তা-ই ঝালিয়ে নিন।
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় কাটাবেন না। এটি মনোযোগ নষ্ট করে।
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন। খুব বেশি চা বা কফি পান করবেন না। এতে ঘুম কম হয়, দুশ্চিন্তা বাড়ে।
  • অতিরিক্ত রাত জাগা বাদ দিতে হবে। ভালো হয় ভোরে হাঁটার অভ্যাস করতে পারলে।
  • নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করুন। আমার কিছুই হবে না, এমন ভাবনা মনে আনবেন না।

পরীক্ষার সময়

জোরদার প্রস্তুতির পরও অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় নিজের সেরাটা দিতে পারেন না কেবল মনোসংযোগের অভাবে। মানসিক চাপ সামলে নিতে পারলে আমাদের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট থাকে। কঠিন প্রশ্নেও মাথা ঠান্ডা রেখে উত্তর দেওয়া যায়। মস্তিষ্ক দ্রুত কাজ করে। প্রশ্ন দেখে উত্তর মনে করতে সময় কম লাগে।

মনে রাখবেন, পরীক্ষার হলে নার্ভাস হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি চাইলে এই উদ্বেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। গভীর শ্বাস নিন। ইতিবাচক চিন্তা করুন। চাপে থাকলে অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়, সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। মন শান্ত থাকলে সময় ভাগ করে নেওয়া সহজ হয়। কোন প্রশ্নে কতটুকু সময় দেবেন, সিদ্ধান্ত নিন।

কোনো প্রশ্ন কঠিন লাগলে বা উত্তর ভুলে গেলে অনেকে হতাশ হয়ে যান। সুস্থ মন দ্রুত সেই হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। পরবর্তী প্রশ্নে ফোকাস করা সহজ হয়।

নিউজটি ‍শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

আরো খবর