বেতন গ্রেড বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। আজ শনিবার বিকেলে ঢাকার শাহবাগে
ঢাকার রাজপথে আবার শিক্ষকদের ওপর চড়াও হলো পুলিশ। এবার আক্রান্ত হয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বেতন গ্রেড বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষকদের পদযাত্রায় লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং জলকামান নিয়ে হামলা চালায় পুলিশ। তাতে শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শিক্ষকেরা বাধা উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে এগোতে চাইলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সদস্যরা পদক্ষেপ নেন। শিক্ষকদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা দাবি আদায়ে ঢাকায় কর্মসূচি পালন করেছিলেন। তখন তাঁদের পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আন্দোলনে নেমেছেন তিন দফা দাবিতে। দাবিগুলো হলো—সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে দেওয়া, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান।
সারা দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক ঢাকায় এসে আজ সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। বিকেলে তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগে এলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
শিক্ষকেরা জানান, শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ চত্বর অভিমুখে পদযাত্রা ও প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরের জন্য কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে কলম সমর্পণের কর্মসূচি ছিল তাঁদের। গণগ্রন্থাগারের সামনে পুলিশ তাঁদের আটকে দিলে তাঁরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর লাঠিপেটার পাশাপাশি জলকামান ব্যবহার করে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ তাৎক্ষণিকভাবে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক রক্তাক্ত হয়েছেন। দুজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।’
পুলিশের হামলায় আহত হয়ে শতাধিক শিক্ষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মীরা জানান। আহতদের মধ্যে নারী শিক্ষকেরাও রয়েছেন।
শিক্ষকদের পরবর্তী কর্মসূচি জানতে চাইলে শামছুদ্দীন বলেন, ‘আমরা এখন শহীদ মিনারে অবস্থান করব। আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’
শিক্ষকদের ওপর হামলার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকেরা যমুনা অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ শাহবাগে ব্যারিকেড দেয়। তাঁরা সেটা ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২-১ জনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিকেল চারটার এই ঘটনার এক ঘণ্টা পর ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে পুলিশি পদক্ষেপের একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, শহীদ মিনার থেকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কিছু আন্দোলনকারী কলম সমর্পণের নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হয়। আনুমানিক চারটার দিকে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটি দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা প্রদান করলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তী সময়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।
শিক্ষকদের বাধা দেওয়ার ব্যাখ্যায় পুলিশ বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিল।







